চ্যাট অন

হ্যেঁ,
এই চ্যাট অন নিয়ে বলতে গেলে আসলে অনেক কথাই বলা যায়, কিন্তু কথায় বলে না যে সব কথা
তো আর বলা যায় না কিছু কিছু কথা নিজের মতো করে বুঝে নিতে হয় । আগে যখন ইন্টারনেট,
ফেসবুক এরকম কিছু ছিল না তখন আমরা আমাদের অবসর সময় কি করে কাটাতাম সে
আমরা সবাই জানি, পাড়ায় বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ,গান শুনে, বই পড়ে । এখন
বিশ্বায়নের যুগে মানুষের জীবনযাত্রা এতটাই ফাস্ট যে পাড়ায় বসে আড্ডা দেয়ার সময় আর
কই । এখন আমরা গান শুনি, বইপড়ি, খেলি কিন্তু সবি অনলাইনে । প্রেম নিবেদনও হয়
অনলাইনে । ব্রোডব্যান্ড- ওয়াইম্যাক্স- থ্রিজির প্রেম তো যত সহজে কানেক্ট হয় তত
সহজেই আবার ডিসকানেক্ট ও হয়ে যায় । পথ চলতে একাকীত্বের যন্ত্রণাকে ভুলিয়ে
দিতে অনেকটাই সাহায্য করে চ্যাট, ফেসবুক
সে তার মতো করেই মানুষের জীবনে যেন একটা জায়গা করে নিয়েছে । মোবাইল একাই যেখানে সবকিছু
সামলে নিয়েছে সেখানে যদি থাকে ট্যাব তা’লে তো আর কথাই নেই ।
হোয়াটসআপ , লাইন ইত্যাদি মাধ্যম ও অনেক সাড়া জাগানো, স্কাইপ করে অনেকে তো কোচিং
ক্লাস গুলো ও সেড়ে নিচ্ছেন ।
এফবিতেই আমার এক স্কুল ফ্রেন্ড সুমিতা কে খুঁজে
পাই । প্রায় দশ বছর পর আলাপ, তাই টানা এক দেড় মাস জুড়ে চুটিয়ে আড্ডা দি দুজনে ।
চ্যাট এ মনের কত কথাই না আদান প্রদান হল, কথার ফাঁকেই জানতে পারি ও একটা প্রাইভেট
স্কুলে পড়ায় মোটামুটি হাত খরচা বেরিয়ে যায় । পেশায় দুজনেই ডাক্তার ওর বাবা – মা রোজই
বলতেন ওকে একটা ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিলেই বাঁচেন ওরা । তাদের
কথা হল গ্রেজুয়েশন করে বিএড – ফিএড করে লাভ ই বা কি, অনেকেই ঘরে বসা । এর চেয়ে
তো বিয়ে টা করে নিলেই ভালো যা সুমিতার মোটেই পচ্ছন্দ ছিল না, ওর মতে চাকরি না
পাওয়ার সমস্যাটা আজকাল কারো একার নয়, এটা জেনারেশনের । কথার ফাঁকে সুমিতা এরকম অনেক
কথাই বলতো যা আমি ক্যাচ করে নিতাম । সেদিন সকালে এফবি খুলে দেখি ও নেই এফবিতে,
অ্যাকাউণ্ট ডিঅ্যাকটিভেট । একটা ফোন নং দিয়েছিলো তাতেও ডাজ নট একসিট, চিন্তা হতে লাগল
কী হল সুমিতার, সব ঠিক আছে তো ! এরকম করেই
দুদিন গেল তারপর ওর মাসতুতো বোন দীপা দি কে ফোন করে জানতে পারলাম সুমিতার বাবা জোর করে ওকে
যে ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন সে একটা অন্যরকম
মানুষ, যার অন্য সব কীর্তিও রয়েছে । সুমিতার তাই নিজেকে সেই পরিবেশে মানিয়ে নিতে
কষ্ট হচ্ছে । শুধু চ্যাট বক্স থেকেই নয় এরকম কত সুমিতাই হয়তো প্রতিদিন হারিয়ে যায়,
কে রাখে সে খবর !
চ্যাট অন মানেই যে ফ্লার্ট অন সেটা
কিন্তু নয়, অনেক অজানা তথ্য জানার সাথে সাথে মানুষের ‘মুড অন’ করার ক্ষেত্রে ও
অনেকটা সাহায্য করে । সুদূরে বসে থাকা বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে আপনি একসময় হয়তো
ভুলেই গেলেন যে কোনো কারণে আপনার ‘মুড অফ’ ছিলো । এখন চ্যাট অন মোবাইলের যুগ তাই
পথ চলতে চলতে আঙুল ও চলে আর মুখে একটা মিষ্টি হাসি লেগে থাকে । ধরুন আপনাকে
রাঙিরখাড়ি স্টেট ব্যাঙ্ক যেতে হবে, তো বেশ আপনি সেন্ট্রাল রোড থেকে অটোয় ওঠলেন,
অটো চালক আপনাকে কোথায় যাবেন জিজ্ঞেস করলে আপনি শুধু মাথা নেড়ে বললেন সামনে। এবার
মেহেরপুর গিয়ে আপনি
বললেন, ধ্যাত তরিকা, অনেকদূর চলে এলাম ।
এরকমও তো হয়, তাই নয় কি! এর কারণ কিন্তু একটাই, চ্যাট বক্স অন ছিলো আর আপনি হয়তো
টেস্টি কোনো রেসিপি বা মজার কোনো আড্ডায় ডুবে ছিলেন অনলাইনে । আজকাল আরেকটা মজা
দেখা যায়, অনেকেই চ্যাট অফ করে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেন । অনেকের মধ্যে তো আবার
মুখোবই বা এফবি ছেড়ে দেয়ারও প্রবণতা দেখা দিয়েছে যা ক্রমশ ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে ।
কিন্তু আসলে অ্যাকটিভেট থাকলেই লোকে খবর নেবে ভালো মন্দের, ডিঅ্যাকটিভেট হয়ে গেলে
সময়ের সাথে ভুলে যাবে, কেউ এসে বনলতা সেনের মতো চোখ তুলে জিজ্ঞেস ও করবে না ‘এতদিন
কোথায় ছিলেন’! পৃথিবীতে আসলে থাকলেই মজা, না থাকলে আবার কিসের মজা কিসের আনন্দ ।
আর আনফ্রেন্ড / ব্লোকফ্রেন্ড করা সে ঝামেলা তো লেগেই আছে সেদিকে না হয় আর গেলাম না
। এফবি নিশ্চয়ই সারাক্ষণের জন্য নয়, দিনের লেজার বা অবসর সময়টুকু যদি হাসি খুশি
ভাবে কাটানো যায় তাতে ক্ষতিই বা কী ! অনেক লেখালিখি হচ্ছে এ নিয়ে আজকাল, সম্প্রতি বাংলা – হিন্দি
ছবি ও হয়েছে এ নিয়ে । আসলে সব জিনিষেরই তো সুফল - কুফল থাকে, এর ও রয়েছে । সেই
তর্কে – বিতর্কে না গিয়ে শুধু এটা বলতে পারি ‘চ্যাট অন’ কে ‘মুড অন’ এর আরেক নাম
বলা যেতেই পারে ।
প্রতাপ , পুজো
সংখ্যা ২০১৪ । শিলচর ।