সরস্বতী বন্দনা
ত্বং ত্বং সরস্বতী নির্মলো বরণে
হরে হরে মুকুতা গজমোতি হার
দেও দেও সরস্বতী বিদ্যার ভার
ওঠো ওঠো সরস্বতী
মোর কণ্ঠে বইশো
যাবৎ জীবন তাবৎ থাকো
দিনে দিনে বিদ্যা বাড়িতে থাকো। (প্রণাম)
[জ্ঞান, সঙ্গীত ও শিল্পকলার দেবী সরস্বতীর এই মন্ত্রটি বা বন্দনাটি আমাকে শিখিয়ে ছিলেন আমার এক দাদু (আমার মা র মেসোমশাই শ্রদ্ধেয় হিমাংশু সেন (রুনু), উনি ছিলেন বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ জেলার একটি গ্রাম মাইঝগ্রাম এর একজন জমিদার। তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী তথা যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ডক্টর ত্রিগুণা সেন এর ভাইপো। এরকম একজন ব্যাক্তির সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হয় তখন আমি একেবারেই ছোট, ক্লাস ওয়ান টু তে পড়ি হবে। এখন উনি বেঁচে থাকলে হয়তো অনেক কাজের তথ্য আরও পেতাম। এবারে প্রশ্ন তিনি এটি আমাকে শেখালেন কেন? আমার বাল্যবন্ধু জয় (রূপজ্যোতি ভট্টাচার্য) কে দেখতাম রোজ স্নান করে ভেজা শরীরে গামছা পরে সূর্যের দিকে তাকিয়ে প্রণাম করে 'জবা কুসুম' মন্ত্র বলে। পুরো মন্ত্র টন্ত্র বলে শেষে আরও একটা কি জানি বলে একটা লাইন বলত 'কাঁথা নিল শিয়ালে, আনিয়া দিল বিয়ালে' লাইনটা আমাকে খুব আকর্ষণ করত, বুঝতাম না 'বিয়ালে' ভাবতাম, কাঁথা শেয়াল নিয়ে গেছে বেড়াল ফেরত দিয়ে যাবে। আমি এই কথা শুনে খুব মজা পেতাম জেনে সেও চিৎকার করে করে শুনিয়ে শুনিয়ে বলত। ভাবতাম এটাই 'জবা কুসুম' মন্ত্র সবাইকে বলতাম আমাকেও 'জবা কুসুম' পুরো মন্ত্রটা শিখিয়ে দিতে, সবাই বলত যে ওই মন্ত্র মেয়েরা বলে না শুধু ব্রাহ্মণ ছেলেরাই বলতে পারে।
একদিন মা র সাথে মাইঝগ্রাম দাদুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়া হয়, সেখানে দাদুকে বলি মন্ত্রটি শিখিয়ে দিতে। দাদু বললেন এই মন্ত্র না হলেও উনি সরস্বতীর একটা মন্ত্র শিখিয়ে দেবেন আর রোজ স্নান করে বলতে। কথা মতো বড়ো একটা পুকুর পারে নিয়ে গিয়ে মাছ ধরতে ধরতে এই মন্ত্রটি শিখিয়ে দিলেন। আমি ছোটবেলা থেকেই রোজ স্নান করে কবিতাটি মন্ত্রের মতো বলেছি এখনও অভ্যাস মতো কখনও হয়ে যায় বিড়বিড় করে, কিন্তু যখনই কাউকে জিজ্ঞেস করি এটা জানো? বলে না। এখন প্রশ্ন জাগে মনে তাহলে কী ওটা ওনার নিজস্ব লেখা? অনেক সার্চ করে একটি লেখা পেয়েছি গুগোলে মিলে যায় কিছুটা কিন্তু হুবহু নয়। এই মন্ত্রটি বা সরস্বতী বন্দনাটি এখানে ব্লগে তুলে রাখার কারণ আছে যদি সত্যি এটা ওনার লেখাই হয়ে থাকে তাহলে আমার সাথে যাতে এটাও একদিন হারিয়ে না যায়। সবার কাছে পৌঁছে দিতেই এখানে তুলে রাখা। কে জানে এই মন্ত্র বলেই যদি লেখাপড়ায় খুব খারাপ থাকা ছেলেমেয়েরাও মা সরস্বতীর বর পেয়ে যায় আর পড়াশোনায় মনোযোগ চলে আসে! 😃
সঙ্গে পোস্টটি পড়ে কারো যদি মনেহ্য় এই মন্ত্রটি বা সরস্বতী বন্দনাটি জানা আছে তাহলে অবশ্যই জানাবেন।]
ধন্যবাদ,
ড. সুব্রতা মজুমদার, শিলচর, আসাম।
No comments:
Post a Comment